জাঙ্গল উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগঃ-
অভিযোজনের প্রকৃতি অনুযায়ী জাঙ্গল উদ্ভিদ কে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
যথা--
১. খরা বর্জনকারী (Drought Avoiding):- শুষ্ক অঞ্চলে যেসব ক্ষুদ্রাকৃতির উদ্ভিদ জলের অভাবকে এড়িয়ে চলার জন্য অতি অল্প সময়ের মধ্যে জীবনচক্র সম্পন্ন করে ফেলে, তাদের খরা বর্জনকারী উদ্ভিদ বলে।
বর্ষা ঋতুর শুরুতে বীজের অঙ্কুরোদগম হয়, তারপর দ্রুত বেড়ে ওঠে পূর্ণতা লাভ করে ফুল ফোটায় ও মাটি শুকিয়ে যাওয়ার আগে বীজ উৎপন্ন করে।
এরা ক্ষণস্থায়ী বর্ষজীবী উদ্ভিদ।
উদা:- করবী, পাথরকুচি, লবঙ্গ প্রভৃতি।
২. খরা মোচনকারী (Drought Escaping):- খরা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য যে সমস্ত ক্ষুদ্রাকৃতির উদ্ভিদের মাটির উপরের অংশ খরার সময় বা প্রতিকূল পরিবেশে শুকিয়ে যায় এবং মাটির নিচের অংশ সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়, তাদের খরা মোচনকারী উদ্ভিদ বলে।
বৃষ্টিতে মাটি সরস হয়ে উঠলে এই প্রকার উদ্ভিদের মাটির তলার অংশ থেকে পুনরায় নতুুুন উদ্ভিদ জন্মায়।
উদা:- শিয়ালকাঁটা, বননীল, ক্যাসিয়া প্রভৃতি।
৩. খরা প্রতিরোধকারী (Drought Resisting):- শুষ্ক অঞ্চলের যে সমস্ত উদ্ভিদ সময়ে সময়ে অঙ্গসংস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে সারা বছর ধরে খরাকে প্রতিরোধ করে বেঁচে থাকে, তাদের খরা প্রতিরোধকারী উদ্ভিদ বলে।
এই প্রকার উদ্ভিদ বর্ষার সময় মূল, কাণ্ড ও পাতায় জল সঞ্চয় করে রাখে এবং বৃষ্টিহীন শুষ্ক ঋতুতে ও চরম খরার সময় ওই সঞ্চিত জলকে বেঁচে থাকার জন্য ব্যবহার করে।
উদা:- ফণীমনসা, রসালো ক্যাকটাস, ঘৃতকুমারী, শতমূলী প্রভৃতি।
৪. খরা সহ্যকারী (Drought Enduring):- যে সমস্ত উদ্ভিদ দীর্ঘসময় মাটিতে জলের অভাব অথবা দীর্ঘসময় ধরে তীব্র খরা ও শুষ্কতাকে সহ্য করতে পারে, তাদের খরা সহ্যকারী বা খরা সহনশীল উদ্ভিদ বলে।
এই সমস্ত উদ্ভিদগুলোই প্রকৃত জাঙ্গল উদ্ভিদ।
এই প্রকার কিছু কিছুুু উদ্ভিদ মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ধরে তীব্র খরাকে সহ্য করতে পারে।
উদা:- বাবলা, আকন্দ, খেজুর প্রভৃতি।
জাঙ্গল উদ্ভিদের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যঃ- জাঙ্গল উদ্ভিদের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপ--
অঙ্গসংস্থানিক অভিযোজন:-
◆ প্রধান মূল মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
◆ মূল সুগঠিত, মূলরোম ও মূলত্রাণযুক্ত।
◆ কান্ড খর্বাকার ও কাঁটাযুক্ত।
◆ কান্ডগুলি মোম জাতীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে।
◆ পাতাগুলি শক্ত, মসৃৃৃণ ও রোম মোমের আস্তরণ দিয়ে ঢাকা।
◆ কিছু কিছু উদ্ভিদের কান্ড ও পাতা কাঁটায় পরিণত হয়।
শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন:-
◆ শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাতা ও কান্ডে প্রয়োজনমতো জল সঞ্চয় করে রাখে।
◆ পত্ররন্ধ্র দিনে বন্ধ রাখে ও রাতে খোলা রাখে।
◆ বাষ্পমোচনের হার সাধারণত কম হয়।
◆ কলা ও কোষের হ্রাস-বৃদ্ধি অর্থাৎ, সংকোচন-প্রসারণ ঘটায়।
◆ দিনের বেলা বা তীব্র খরার সময় প্রস্বেদন ক্রিয়া কমিয়ে দেয়।