গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ুর ওপর 'ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু' এবং শীতকালীন মৌসুমী বায়ুর ওপর 'উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ু' ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশে জেট বায়ুর অবস্থানের উপরই মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু ও ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ুঃ-
সূর্যের উত্তরায়নের সাথে সাথে উত্তর গোলার্ধের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ভাবেই ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এই সময় তিব্বত মালভূমি অধিক উত্তপ্ত হয়ে উঠলে উক্ত স্থলভাগে এক শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় ও ভারত উপমহাদেশের প্রায় মাঝ বরাবর (অর্থাৎ, ১৩°-১৪° উত্তর অক্ষাংশ বরাবর) ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ুর আবির্ভাব ঘটে। এই একই সময়ে ভারত মহাসাগরের উপর উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ুর উপস্থিতিতে জলভাগের উচ্চচাপ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে ও স্থলভাগের নিম্নচাপটি ক্রমশ উত্তরে সরে যেতে থাকে। ফলে, ভারত মহাসাগরীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু রূপে স্থলভাগে প্রবেশ করে এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
শীতকালীন মৌসুমী বায়ু ও উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ুঃ-
সূর্যের দক্ষিণায়নের সাথে সাথে দক্ষিণ গোলার্ধে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বায়ুর চাপ ক্রমশ হ্রাস পেয়ে সংশ্লিষ্ট জলভাগে একটি নিম্নচাপ কক্ষের সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, উত্তর গোলার্ধের উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ু ক্রমশ দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে তা ভারতীয় উপমহাদেশের উপর অবস্থান করে। ফলে উক্ত স্থলভাগে বায়ু চাপ বৃদ্ধি পেয়ে একটি উচ্চচাপ কক্ষের সৃষ্টি করে। ফলে সংশ্লিষ্ট স্থলভাগের উচ্চচাপ থেকে শীতল ও শুষ্ক বায়ু 'উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু' রূপে জলভাগের নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয়।
এইভাবে 'ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু' ও 'উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ু' ভারতীয় উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।