ওজোনস্তর ক্ষয়ের প্রভাব বা ওজোন হ্রাসের প্রভাবঃ-
বায়ুমন্ডলে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ অর্থাৎ ঘনত্ব কমে গেলে তা ওজোন হ্রাস নামে পরিচিত। ওজোন হ্রাসের ফলে বা ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফলে সরাসরি তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না, তবে ওজোন হ্রাসের ফলে সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। ফলে অতিবেগুনি রশ্মির (UV-B, UV-C) কারণে মানুষ সহ জীবজগৎ, জলবায়ু ও বাস্তুতন্ত্রের ওপর বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
✍ মানুষের ওপর প্রভাবঃ
◆ অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের ত্বকের অনাবৃত অংশ তামাটে বর্ণের হয়ে যায়। ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টি হয়।
◆ অতিবেগুনি রশ্মির অধিশোষণের ফলে চোখের লেন্স ও কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অল্প বয়সেই মানুষের চোখে ছানি পড়ে যায়।
◆ অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়ে।
◆ অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বন্ধ্যাত্ব বৃদ্ধি পায়।
✍ প্রাণীজগতের ওপর প্রভাবঃ
◆ অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে নিম্নশ্রেণীর প্রাণীদের বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার ব্যাহত হয়।
◆ জীবজন্তুর প্রজনন ক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
◆ অতিবেগুনি রশ্মির অবাধ অনুপ্রবেশের ফলে বিভিন্ন জলজ প্রাণী, যেমন- চিংড়ি, কাঁকড়া, ছোটো ছোটো মাছ, জু-প্লাঙ্কটন প্রভৃতির বিশেষ ক্ষতি হয়।
✍ উদ্ভিদের ওপর প্রভাবঃ
◆ অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে উদ্ভিদের পাতায় ক্লোরোফিল-এর পরিমাণ হ্রাস পায়।
◆ ফাইটোপ্লাঙ্কটন জাতীয় উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হয়।
◆ অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে গাছের পাতা, ফল ও বীজের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং উদ্ভিদের উৎপাদনশীলতাও হ্রাস পায়।
✍ জলবায়ুর ওপর প্রভাবঃ
◆ অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তর উত্তপ্ত হয় এবং বৈপরীত্য উষ্ণতার সৃষ্টি হয়।
◆ ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণে অতিবেগুনি রশ্মির অবাধ অনুপ্রবেশের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন সংঘটিত হয়।
✍ বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাবঃ
◆ ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফলে বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা, স্থায়িত্ব ও ভারসাম্য বিনষ্ট হবে।
◆ উদ্ভিদের পুষ্টিচক্রের স্বাভাবিক আবর্তন ব্যাহত হবে।