মৃত্তিকা pH :
pH বলতে এক লিটার দ্রবণে সক্রিয় বা মুক্ত হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণকে বোঝায়।
আর, কোনো দ্রবণের মাধ্যমে মাটিতে হাইড্রোজেন আয়নের উপস্থিতিকে মাটির pH বলা হয়।
মৃত্তিকা pH হল মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব নির্ণয়ের একক। মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব নির্ভর করে মাটিতে হাইড্রোজেন ও হাইড্রোক্সিল আয়নের উপস্থিতির উপর। মাটিতে হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বেশি হলে মৃত্তিকা pH এর মান 7 এর কম হয়, ফলে মৃত্তিকা আম্লিক প্রকৃতির হয়। আবার মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোক্সিল আয়নের পরিমাণ বেশি হলে মৃত্তিকা pH এর মান 7 এর থেকে বেশি হয় এবং মৃত্তিকা ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয়। হাইড্রোজেন ও হাইড্রোক্সিল আয়নের পরিমাণ সমান থাকলে pH এর মান 7 হয়, অর্থাৎ মৃত্তিকা প্রশমিত বা নিরপেক্ষ হয়।
মৃত্তিকা pH এর গুরুত্বঃ-
১. মৃত্তিকায় জীবাণুর নিয়ন্ত্রণ:
মাটির মধ্যে জীবাণুর কার্যকারিতা pH এর মাত্রা দ্বারা প্রভাবিত হয়। pH এর মাত্রা কম হলে নাইট্রোজেন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে। pH এর মান ৫.৫ এর কাছাকাছি হলে জীবাণুদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। আবার সামান্য ক্ষারকীয় মৃত্তিকায় কিছু জীবাণুর কর্মদক্ষতা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
২. উদ্ভিদের পুষ্টিমৌলের যোগান:
pH অধিক হলে মাটিতে পটাশিয়াম বেশি পরিমাণে থাকে। মাঝারি আম্লিক প্রকৃতির মাটিতে pH এর মান বাড়ার সাথে সাথে মলিবডেনামের পরিমাণ বাড়ে। মৃত্তিকার pH বাড়লে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এর যোগান বাড়ে, আর pH এর মান খুব কম হলে মাটিতে তামা, দস্তার পরিমাণ কম হয়।
৩. উদ্ভিদের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব:
pH কম হলে মাটিতে লোহা, অ্যালুমিনিয়াম খনিজের আধিক্য দেখা যায় যা উদ্ভিদের পক্ষে ক্ষতিকর। মৃত্তিকায় pH এর মান 4.5 এর কম থাকলে অধিক মাত্রায় ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি দেখা যায়, ফলে উদ্ভিদের ওপর ম্যাঙ্গানিজের ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি হয়।
৪. শস্য উৎপাদনের সাথে সম্পর্ক:
অধিক আম্লিক মৃত্তিকায় অনুকূল মাটির গঠন গড়ে ওঠে না, আবার অধিক pH মাত্রাযুক্ত মাটিতে জল জমে থাকে বলে শস্য উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু, সামান্য আম্লিক থেকে সামান্য ক্ষারকীয় প্রকৃতির মৃত্তিকা বেশিরভাগ শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত।