বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরুপঃ
বায়ুর কার্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় শুষ্ক মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে। আর এই মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
A. অপসারণ ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপঃ-
◆ অপসারণ গর্ত
মরু অঞ্চলে বায়ুর অপসারণ পদ্ধতিতে ক্ষয়ের ফলে বালি অপসারিত হয়ে যে ছোট-বড় নানা আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয় সেগুলিকে বলা হয় অপসারণ গর্ত।
উদা: মিশরের পশ্চিমে অবস্থিত কাতারা পৃথিবীর বৃহত্তম অপসারণ গর্ত।
◆ মরুদ্যান
মরু অঞ্চলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বহুদিন ধরে বায়ুর দ্বারা বালি অপসারিত হলে ওই স্থান ক্রমাগত নিচু হয়ে ভূগর্ভস্থ জলস্তর পর্যন্ত পৌঁছায়। ফলে, মরু অঞ্চলের ওই অংশে উদ্ভিদের সমাবেশ দেখা যায়। একে মরুদ্যান বলে।
উদা: আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে বাহারিয়া নামে
একটি মরুদ্যান দেখা যায়।
চিত্র:
B. অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট ভূমিরুপঃ-
◆ ভেন্টিফ্যাক্ট
মরু অঞ্চলে সারাবছর একই দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হলে শিলাখণ্ডের একদিক অর্থাৎ, বায়ু যেদিক থেকে প্রবাহিত হয় সেইদিক ক্ষয় পেয়ে মসৃণ ও ধারালো হয়। এরূপ একদিক মসৃণযুক্ত শিলাখণ্ড বা পাথরকে ভেন্টিফ্যাক্ট বলে।
উদা: প্রায় সকল মরুভূমিতেই ভেন্টিফ্যাক্ট লক্ষ করা যায়।
◆ ড্রেইকান্টার
মরু অঞ্চলে বায়ু বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত হলে ভিন্নমুখী বায়ুপ্রবাহে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ের দ্বারা কোনো বড় শিলাখণ্ডের বিভিন্ন দিক মসৃণ হয়। এরুপ বিভিন্ন দিক মসৃণ প্রায় ত্রিকোণাকার শিলাখণ্ডকে ড্রেইকান্টার বলে।
উদা: আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে ড্রেইকান্টার দেখা যায়।
◆ ইয়ারদাং
মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর পাশাপাশি ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে লম্বালম্বিভাবে অবস্থান করলে এবং বায়ু শিলাস্তরের সমান্তরালে প্রবাহিত হলে তখন বায়ুপ্রবাহের ফলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় কোমল শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয়ে যায় এবং কঠিন শিলাস্তরগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে উঁচু দেওয়ালের মতো খাড়াভাবে দাড়িয়ে থাকে। এদের বলা হয় ইয়ারদাং।
উদা: মধ্য এশিয়ার তুর্কিস্থানের মরুভূমিতে ইয়ারদাং দেখা যায়।
চিত্র:
◆ জুইগ্যান
মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে প্রথমে কোমল ও পরে কঠিন শিলা আড়াআড়িভাবে অবস্থান করলে শিলাস্তরের ফাটল ও চ্যুতি বরাবর বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ের দ্বারা কোমল শিলা অধিক ও কঠিন শিলা কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ফলে কঠিন শিলাগঠিত অংশে চ্যাপ্টা ও সমতল চূড়াবিশিষ্ট যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে জুইগ্যান বলে।
উদা: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সোনোরান মরুভূমিতে জুইগ্যান দেখা যায়।
চিত্র:
◆ গৌর
মরু অঞ্চলে কোনো বৃহৎ শিলাখণ্ডের ওপরের অংশ কঠিন শিলা এবং নিচের অংশ কোমল শিলা দ্বারা গঠিত হলে বায়ুপ্রবাহের ফলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নিচের অংশ অধিকমাত্রায় ক্ষয় পেয়ে সরু হয়ে যায়। এবং ওপরের অংশ চওড়া ও চ্যাপ্টা হয়ে অবস্থান করে। এই প্রকার ব্যাঙের ছাতার ন্যায় আকৃতির ভূমিরূপকে গৌর বলে।
উদা: আফ্রিকার সাহারা ও এশিয়ার ইরানের মরুভূমিতে গৌর ভূমিরুপ দেখতে পাওয়া যায়।
◆ ইনসেলবার্জ
মরু অঞ্চলে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয়ের ফলে প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হলে এরূপ সমতল অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলার অংশ ক্ষয়কার্য প্রতিরোধ করে কম উঁচু টিলার আকারে বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এরূপ প্রায় মসৃণ গোলাকৃতির অনুচ্চ টিলাকে ইনসেলবার্জ বলে।
উদা: আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে ইনসেলবার্জ দেখা যায়।
চিত্র:
◆ পেডিমেন্ট
মরু অঞ্চলে কোনো উচ্চভূমি বা পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে বায়ুর ক্ষয়কার্যের দ্বারা ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে প্রায় সমতল বা মৃদু ঢাল বিশিষ্ট প্রস্তরময় ভূমিতে পরিণত হয়, তাকে পেডিমেন্ট বলে। মূলত: জলধারা ও বায়ুর মিলিত কার্যের ফলে পেডিমেন্ট গঠিত হয়।
উদা: সাহারা মরুভূমির উত্তর-পশ্চিমে অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায়।