পশ্চিম ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতির কারণঃ
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অতি সাম্প্রতিককালে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলেও পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের প্রসার লক্ষ্য করা যায়। তবে, পশ্চিম ভারতে গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে অধিক সংখ্যায় পেট্রোরাসায়নিক শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে, অর্থাৎ এই অঞ্চলে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের কেন্দ্রীভবন ঘটেছে।
পশ্চিম ভারতে এই পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের উন্নতির কারণগুলি হলো নিম্নরূপ:-
◆ কাঁচামালের সহজলভ্যতাঃ
পশ্চিম ভারতে আরবসাগরের মহিসোপানে বোম্বে হাই অঞ্চল, এছাড়া গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন খনিজ তেল উত্তোলক অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা ট্রম্বে, কয়ালি, জামনগর প্রকৃতি তৈল শোধনাগার থেকে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের কাঁচামাল- ন্যাপথা, মিথেন, ইথিলিন প্রভৃতির পর্যাপ্ত যোগান পাওয়া যায়।
◆ বন্দরের সান্নিধ্যঃ
পশ্চিমাঞ্চলে মুম্বাই, নভসেবা, ওখা ও শুল্কমুক্ত কান্ডালা বন্দর মারফত খনিজ তেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি এবং উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানির সুবিধা রয়েছে।
◆ বিদ্যুতের যোগানঃ
উকাই, কয়না প্রভৃতি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র, ট্রম্বে, কোলাপুর সহ বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এছাড়া, তারাপুর, কাকরাপাড় প্রভৃতি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এ অঞ্চলের শিল্পক্ষেত্রগুলিতে বিদ্যুতের পর্যাপ্ত যোগান পাওয়া যায়।
◆ উন্নত পরিবহন ব্যবস্থাঃ
পশ্চিমাঞ্চলে তৈল শোধনাগার, শিল্পক্ষেত্র ও বাজারের মধ্যে সড়কপথ এবং রেলপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে; যা পেট্রোরাসায়নিক শিল্পে উন্নতির ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক।
◆ মূলধন বিনিয়োগঃ
রিলায়েন্স, মফতলাল প্রভৃতি বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী লাভজনক এই শিল্পক্ষেত্রে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে। এছাড়া, এই শিল্পের গুরুত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় পশ্চিমাঞ্চলের এই শিল্পক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগে সরকারি প্রচেষ্টাও লক্ষ্য করা যায়।
◆ চাহিদা বা বাজারঃ
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক, ডিটারজেন্ট, রং এছাড়া রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রভৃতি এই শিল্প থেকে পাওয়া যায়। ফলে স্থানীয় বাজার ছাড়াও এই শিল্পজাত দ্রব্যের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে।
◆ সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকঃ
পশ্চিমের রাজ্যগুলি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এই অঞ্চলে শিল্পক্ষেত্রগুলিতে সুলভে শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া, দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকেও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমিকের যোগান পাওয়া যায়।
উপরিলিখিত এইসব কারণগুলির জন্য ভারতের পশ্চিমাংশে অধিক সংখ্যায় পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে উঠেছে অর্থাৎ, এককথায় পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের উন্নতি ঘটেছে।