ভারতের মোট পাট শিল্পের প্রায় ৭৮ শতাংশই গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিকট হুগলি নদীর উপর তীরে। অর্থাৎ, এই অঞ্চলে পাট শিল্পের কেন্দ্রীভবন ঘটেছে।
হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের কেন্দ্রীভবন বা একদেশীভবনের কারণগুলি হল---
✍কাঁচাপাটের সহজলভ্যতাঃ
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হুগলি, বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি জেলায় প্রচুর পাট চাষ হয়। ফলে এই অঞ্চল থেকে পাট শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচাপাটের পর্যাপ্ত যোগান সহজেই পাওয়া যায়।
✍বিদ্যুতের যোগানঃ
নিকটবর্তী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে তাপবিদ্যুৎ, এছাড়া দামোদর ও ময়ূরাক্ষী প্রকল্পের জলবিদ্যুৎ এই অঞ্চলের শিল্পের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা মেটায়।
✍কলকাতা বন্দরের উপস্থিতিঃ
এই অঞ্চলে পাট শিল্পের কেন্দ্রীভবনের অন্যতম কারণ কলকাতা বন্দরের নৈকট্য। শিল্পের প্রয়োজনীয় উন্নত যন্ত্রপাতি আমদানি এবং শিল্পে উৎপাদিত পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানির সুবিধা হয়েছে কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে।
✍উন্নত পরিবহন ব্যবস্থাঃ
এই অঞ্চলটি সড়কপথ, রেলপথ ও জলপথের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাঁচা পাট আনয়ন এবং পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি সহজতর হয়েছে এই পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে।
✍ হুগলি নদীর জলঃ
এই অঞ্চলের পাটকলগুলিতে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত জল নিকটস্থ হুগলি নদী থেকে পাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
✍আর্দ্র জলবায়ুঃ
এখানকার জলবায়ু আর্দ্র প্রকৃতির যা পাট শিল্প গড়ে তোলার পক্ষে অন্যতম সহায়ক।
✍সুলভ শ্রমিকঃ
পশ্চিমবঙ্গ ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্বল্পমজুরিতে শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া, প্রতিবেশী রাজ্য বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা থেকে প্রচুর সুলভ শ্রমিক পাওয়া যায়।
✍চাহিদাঃ
এদেশে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।এছাড়া, পাট শিল্পে ভারত একটি অগ্রণী দেশ হওয়ায় বিদেশেও এদেশের পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা অনেকটা বেশি।
✍মূলধনের যোগানঃ
শিল্প স্থাপনের প্রাথমিক অবস্থায় ইংরেজরা এই শিল্পে মূলধন বিনিয়োগ করে। পরে, কলকাতা বাণিজ্য ও ব্যাঙ্কিং ব্যবসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রভূমি হওয়ায় মূলধনের যোগানে বিশেষ সুবিধা হয়েছে।
✍ঐতিহাসিক কারণঃ
পাটশিল্পের প্রথমদিকে ইংরেজদের শাসনকালে ভারতের রাজধানী এবং প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল কলকাতা। তাই কলকাতার নিকটে হুগলি নদীর দুই তিরে ইংরেজদের উদ্যোগে পাটকলগুলি স্থাপিত হয়।
