জীববৈচিত্র্য বিনাশের বা বিলুপ্তির কারণ
সারা বিশ্ব জুড়ে জীববৈচিত্র্যের বিনাশ বা বিলুপ্তি ঘটে চলেছে। এই জীববৈচিত্র্য বিনাশের পশ্চাতে যেসব কারণগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী, সেগুলি হল নিম্নরূপ---
প্রাকৃতিক কারণসমূহ
🔵 জলবায়ু পরিবর্তন: পৃথিবীতে জীবকুলের সৃষ্টির পরবর্তীকালে বহুবার জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে বিভিন্ন জীবপ্রজাতি অভিযোজন ঘটাতে না পেরে অবলুপ্ত হয়েছে।
🔵 প্রাকৃতিক বিপর্যয়: বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ঝড়ঝঞ্জা সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বহু ক্ষেত্রেই জীবপ্রজাতির বিনাশ ঘটে। ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়।
এছাড়া, বনভূমিতে দাবানলের সৃষ্টি হলে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি বিপন্ন হয়।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণসমূহ
🔵 অবাধ বৃক্ষচ্ছেদন: জ্বালানির প্রয়োজনে কাঠ সংগ্রহ সহ কাঠ চেরাই শিল্প ও কাগজ শিল্পে কাঁচামালের যোগান দিতে অবাধে গাছ কাটার ফলে বনভূমি ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে জীবপ্রজাতির সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
🔵 উদ্ভিদ প্রজাতির আহরণ: আয়ুর্বেদিক ঔষুধ প্রস্তুতির প্রয়োজনে বনভূমি থেকে ভেষজ উদ্ভিদ, লতাগুল্ম নির্বিচারে আহরণ করা হচ্ছে। ফলে, বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতি সংখ্যায় দ্রুত কমতে কমতে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে।
🔵 বন্যপ্রাণী শিকার: বিভিন্ন সংরক্ষিত ও অসংরক্ষিত বনভূমিতে নির্বিচারে বন্যপ্রাণী শিকারের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। ফলে, কিছু প্রাণী প্রজাতি বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিতে পরিণত হচ্ছে এবং কিছু প্রজাতি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অশনি সংকেত।
🔵 পরিবেশ দূষণ: সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে প্রতিনিয়ত জলদূষণ, মাটিদূষণ ও বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। ফলে দূষণজনিত কারণে বহু উদ্ভিদ প্রজাতি এবং ক্ষুদ্র প্রাণী প্রজাতির বিনাশ ঘটছে।
🔵 আবাসস্থল সংকোচন: কৃষিজমি সম্প্রসারণ সহ রেলপথ নির্মাণ, কলকারখানা স্থাপন, সর্বোপরি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন প্রভৃতি অর্থনৈতিক উদ্যোগের কারণে জীব প্রজাতির প্রাকৃতিক বাসভূমি বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয় এবং আবাসস্থল সংকুচিত হয়। ফলে, বিভিন্ন প্রজাতির অবলুপ্তির সাথে সাথে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে।
🔵 বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ: কোনো বাস্তুতন্ত্রে বহিরাগত জীব প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটলে স্থানীয় প্রজাতিগুলির ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং অনেকসময় কিছু স্থানীয় প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে। ফলে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
🔵 অপরিকল্পিত উন্নয়ন: পরিবেশগত ঝুঁকির কথা বিবেচনা না করে কলকারখানা স্থাপন সহ বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ, জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রভৃতি পরিকল্পনা অপরিকল্পিতভাবে রূপায়ণ করতে গিয়ে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী চিরতরে হারিয়ে যায়।