জনসংখ্যা বিবর্তন তত্ত্ব বা ''Demographic Transition Model''
জনসংখ্যার বিবর্তন তত্ত্বের মূল কথা হল- জনসংখ্যার ধারাবাহিক পরিবর্তন। এই জনসংখ্যার ক্রম বিবর্তন নির্ধারিত হয় মূলত জন্মহার ও মৃত্যুহারের দ্বারা। ওয়ার্নার থম্পসন জনসংখ্যার হ্রাস বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে জনসংখ্যার বিবর্তনকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। জনসংখ্যার বিবর্তন তত্ত্বের চারটি পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ---
প্রথম পর্যায় বা প্রাক্-শিল্প পর্যায়ঃ প্রথম পর্যায় বলতে শিল্প বিপ্লবের আগের সময়কে বোঝানো হয়। জনবিবর্তন তত্ত্বের এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল---
◆ উচ্চ জন্মহার---উচ্চ মৃত্যুহার। অর্থাৎ, জন্মহার ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি।
◆ জনসংখ্যার স্বল্প বৃদ্ধি
◆ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি
◆ আর্থসামাজিক পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল।
◆ অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার মন্থর।
উদা: আফ্রিকা মহাদেশের গ্যাবন, জাম্বিয়া, সোয়াজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
দ্বিতীয় পর্যায় বা নবীন পাশ্চাত্য পর্যায়ঃ শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে এই পর্যায় শুরু। জনবিবর্তন তত্ত্বের এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল---
◆ উচ্চ জন্মহার---নিম্ন মৃত্যুহার। অর্থাৎ, জন্মহার অনিয়ন্ত্রিত এবং চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির ফলে মৃত্যুহার কম।
◆ জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। ফলে জনবিস্ফোরণ দেখা যায়।
◆ অর্থনীতি প্রধানত মিশ্র প্রকৃতির।
◆ আর্থসামাজিক পরিকাঠামো ধীরে ধীরে মজবুত হয়।
উদা: ভারত, বাংলাদেশ, চীন, রোমানিয়া প্রভৃতি দেশ এই পর্যায়ের অন্তর্গত।
তৃতীয় পর্যায় বা আধুনিক পাশ্চাত্য পর্যায়ঃ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে এই পর্যায়ে। জনবিবর্তন তত্ত্বের এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল---
◆ নিম্ন জন্মহার---নিম্ন মৃত্যুহার। অর্থাৎ, জন্মহার অনেকটা নিয়ন্ত্রিত এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য মৃত্যুহার অনেক কম।
◆ জনসংখ্যার ধীর বৃদ্ধি ঘটে।
◆ আধুনিক কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যভিত্তিক অর্থনীতি।
◆ সবল অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে।
◆ জীবনযাত্রার মানের সর্বাঙ্গীন উন্নতি ঘটে।
উদা: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান প্রভৃতি দেশ এই পর্যায়ের অন্তর্গত।
চতুর্থ পর্যায় বা পরিণত পর্যায়ঃ শিল্প ও বাণিজ্যভিত্তিক অবস্থার ফলে এই পর্যায়ে দেশের সার্বিক উন্নতি ঘটে। জনবিবর্তন তত্ত্বের এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল---
◆ নিম্ন জন্মহার---অতি নিম্ন মৃত্যুহার। অর্থাৎ, জন্মহার সম্পূর্ণরূপে সুনিয়ন্ত্রিত।
◆ জনসংখ্যার স্থিতাবস্থা দেখা যায়।
◆ জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
◆ অর্থনৈতিক কাঠামো সুদৃঢ় থাকে। এবং জনসংখ্যা কমে গেলে সবল অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা।
উদা: নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশ এই পর্যায়ের অন্তর্গত।