বাংলাদেশে পাট চাষের উন্নতির কারণঃ-
পাট বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট উৎপাদন ও পাটজমির পরিমাণ অনুসারে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে।
যেসব প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশ পাটচাষে উন্নতিলাভ করেছে, সেগুলি হল নিম্নরূপ---
✍ প্রাকৃতিক কারণঃ
🔷উষ্ণতা: বার্ষিক ২২° সে. থেকে ৩৫° সে. উষ্ণতা পাট চাষের জন্য উপযোগী। আর, বাংলাদেশের গড় উষ্ণতা প্রায় ২৬° সে. এবং উষ্ণতম মাসের উষ্ণতাও ৩২° থেকে ৩৫° সে. এর কাছাকাছি।
🔷বৃষ্টিপাত: পাট চাষের জন্য বার্ষিক ১৫০ থেকে ২০০ সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ১৫০ সেমির পাশাপাশি, যা পাটচাষের অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করে।
🔷ভূপ্রকৃতি: নদীগঠিত সমতল ভূপ্রকৃতি পাট চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। আর, নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা সমতল প্লাবনভূমির অন্তর্গত।
🔷মৃত্তিকা: পলি ও দোআঁশ মৃত্তিকায় পাট চাষ ভালো হয়। আর বাংলাদেশের পদ্মা-মেঘনা-যমুনার বিস্তৃত সমতলভূমি পলি ও দোআঁশ মাটি দ্বারা গঠিত।
✍ অপ্রাকৃতিক কারণঃ
🔷ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: দেশভাগের পূর্বে হুগলি নদীর দু'পাশে গড়ে ওঠা পাটকলগুলিতে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বগুড়া, রংপুর, পাবনা, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে বেশিরভাগ পাটের যোগান আসত। ফলে বর্তমান বাংলাদেশের ঐ অঞ্চলগুলিতে পাট চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
🔷উন্নত পরিবহন: বাংলাদেশে অসংখ্য নদ-নদী থাকায় উৎপাদিত পাট নদীপথে দেশের বিভিন্ন পাটকল, শহর ও বন্দরগুলিতে পাঠানোর সুবিধা হয়েছে।
🔷সুলভ শ্রমিক: পাটের বীজ বোনা থেকে শুরু করে পাট কাটা, জলাশয়ে পাট পচানো, আঁশ ছাড়ানো প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন। বাংলাদেশ জনবহুল হওয়ায় এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন ধরে পাট চাষে যুক্ত থাকায় এখানে সুলভ শ্রমিকের যোগান সহজে পাওয়া যায়।
🔷আন্তর্জাতিক বাজার: বাংলাদেশের উৎপাদিত পাটের গুণগত মান যথেষ্ট উন্নত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে এদেশের পাটের চাহিদা অনেক বেশি।