করি বা সার্কঃ
উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে উপত্যকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে হাতল লাগানো ডেকচেয়ারের মতো ভূমিরুপ সৃষ্টি হয়, তাকে করি বা সার্ক বলে।
উদা: হিমালয় পর্বতের হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে এই প্রকার সার্ক ভূমিরুপ দেখা যায়।
এরিটি বা হিমশিরাঃ
হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে পাশাপাশি দুটি করি গঠিত হলে তাদের মধ্যবর্তী খাড়া পর্বত প্রাচীরটি আরো ক্ষয়প্রাপ্ত ও সংকীর্ণ হয়ে শিরার আকারে অবস্থান করলে, তাকে হিমশিরা বা এরিটি বলে।
উদা: উত্তরাঞ্চলের মোকামায় পরিত্যক্ত দুটি সার্কের মধ্যবর্তী শৈলশিরাটি এরিটি বা হিমশিরার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরন।
পিরামিড চূড়াঃ
হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে একটি পর্বতের বিভিন্ন দিকে পাশাপাশি তিন-চারটি বা তার বেশি করি গঠিত হলে মাঝখানের পর্বতচূড়াটিকে অনেকটা পিরামিডের মতো দেখতে হয়, একে পিরামিড চূড়া বলে।
উদা: আল্পস পর্বতের ম্যাটারহর্ন, ভিসহর্ন, হিমালয়ের নীলকন্ঠ শৃঙ্গ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পিরামিড চূড়া।
'U' আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণিঃ
হিমবাহ উপত্যকার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় যদি পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় প্রায় সমানভাবে হয় তবে উপত্যকাটির আকৃতি ইংরেজি 'U' অক্ষরের মতো হয়, একে 'U' আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি বলে।
উদা: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে হিমদ্রোণি দেখা যায়।
ঝুলন্ত উপত্যকাঃ
পার্বত্য অঞ্চলে প্রধান হিমবাহের দুপাশ থেকে ছোটো ছোটো হিমবাহ এসে প্রধান হিমবাহে মিলিত হলে, হিমবাহের ক্ষয়কার্যে সৃষ্ট উপ-হিমবাহের উপত্যকার গভীরতা প্রধান হিমবাহ উপত্যকার থেকে কম হয়। গভীরতার এই পার্থক্যের জন্য উপ-হিমবাহ যেখানে প্রধান হিমবাহে মেশে মনে হয় যেন, উপ-হিমবাহের উপত্যকা প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে, একে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।
উদা: হিমালয়ে বদ্রীনাথের কাছে ঋষিগঙ্গা উপত্যকাটি একটি ঝুলন্ত উপত্যকার উদাহরণ।
রসে মতানেঃ
হিমবাহের প্রবাহপথে কোনো কঠিন শিলাখন্ড উঁচু ঢিবির আকারে অবস্থান করলে, ক্ষয়কার্যের ফলে হিমবাহ প্রবাহের দিকের শিলাখন্ড মসৃণ ও বিপরীত দিকের শিলাখন্ডের অংশ এবড়ো-খেবড়ো বা অমসৃণ হয়। এই ধরনের ঢিবি কে রসে মতানে বলে।
উদা: কাশ্মীরে ঝিলাম নদীর উপনদী লিডার নদী উপত্যকায় এই 'রসে মতানে' ভূমিরুপের সৃষ্টি হয়েছে।
টিলা ও পুচ্ছঃ
হিমবাহের প্রবাহপথে প্রথমে কঠিন ও পরে কোমল শিলা অবস্থান করলে হিমবাহের কার্যে কঠিন শিলা কম ক্ষয় পেয়ে কোমল শিলাকে হিমবাহের ক্ষয়কার্য থেকে রক্ষা করে। নরম শিলা তখন কঠিন শিলার পেছনে লেজের আকারে অবস্থান করে, একে বলা হয় পুচ্ছ এবং কঠিন শিলাখন্ডকে বলা হয় টিলা।
উদা: স্কটল্যান্ডের এডিনবরা কাসল্ অঞ্চলে টিলা ও পুচ্ছ দেখা যায়।