A. উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে সঞ্চয়ের ফলে গঠিত ভূমিরূপঃ- উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে যেসব ভূমিরুপ সৃষ্টি হয়, তা হল--
গ্রাবরেখাঃ উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়ের দ্বারা সৃষ্ট পদার্থসমূহ হিমবাহের সঙ্গে বাহিত হয়ে উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয়। হিমবাহের দ্বারা এইপ্রকার সঞ্চয় কে গ্রাবরেখা বলে।
অবস্থান অনুসারে গ্রাবরেখাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।
1. পার্শ্ব গ্রাবরেখা: হিমবাহের প্রবাহপথের দু'পাশে গ্রাবরেখা অবস্থান করলে, তাকে পার্শ্ব গ্রাবরেখা বলে।
2. মধ্য গ্রাবরেখা: দুটি পাশাপাশি হিমবাহ একসঙ্গে মিলিত হলে উভয়ের মধ্যবর্তী সীমারেখায় যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয় তাকে মধ্য গ্রাবরেখা বলে।
3. ভূমি গ্রাবরেখা: হিমবাহের তলদেশের ভূমিতে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হলে তাকে ভূমি গ্রাবরেখা বলে।
4. প্রান্ত গ্রাবরেখা: হিমবাহ যেখানে এসে গলে যায় সেই প্রান্তে যে গ্রাবরেখার সৃষ্টি হয়, তাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
উদাহরন: তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচেন ও লাচুং অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়।
B. পর্বতের পাদদেশে সঞ্চয়ের ফলে গঠিত ভূমিরূপঃ- পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নাংশে হিমবাহ ও হিমবাহ গলা জলধারার মিলিত কার্যে যেসব ভূমিরুপ সৃষ্টি হয়, সেগুলি হল--
১. কেমঃ হিমবাহের শেষ প্রান্তে বরফ গলে গেলে হিমবাহের মধ্যে থাকা নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা প্রভৃতি স্তুপের আকারে জমে যে ত্রিকোণাকার ব-দ্বীপের ন্যায় ভূমিরুপ সৃষ্টি করে, তাকে কেম বলে।
কেম ধাপে ধাপে গঠিত হলে তাকে কেম সোপান বলে।
উদা: স্কটল্যান্ডের ল্যামার মুয়ার উপত্যকায় কেম ও কেমসোপান দেখা যায়।
২. আগামুকঃ বিভিন্ন আকৃতির শিলাখন্ড হিমবাহের সঙ্গে বহুদূর থেকে বাহিত হয়ে এসে পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হলে, তাকে আগামুক বলে। আগামুক কথার অর্থ হল আগন্তুক।
উদা: কাশ্মীরের পহেলগামের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে আগামুক দেখতে পাওয়া যায়।
৩. হিমকর্দ বা বোল্ডার ক্লেঃ হিমবাহ গলে গেলে তার নীচে হিমবাহ বাহিত প্রস্তরখন্ড, নুড়ি, বালি ও কাদা প্রভৃতি অসংবদ্ধভাবে একসঙ্গে সঞ্চিত হলে, তাকে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ বলে।
উদা:
৪. ড্রামলিনঃ হিমবাহ বাহিত বিভিন্ন আকৃতির শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে উল্টানো নৌকা বা উল্টানো চামচের মতো আকৃতির ভূমিরুপ গঠন করলে তাকে ড্রামলিন বলে।
উদা: সুইজারল্যান্ডে আল্পস পর্বতের পাদদেশে ড্রামলিন দেখা যায়।
৫. এসকারঃ হিমবাহ বাহিত নুড়ি, কাঁকর, বালি, পাথর প্রভৃতি পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে আঁকাবাঁকা শৈলশিরার মতো ভূমিরুপ গঠন করলে, এই ধরনের ভূমিরুপকে এসকার বলে।
উদা: ফিনল্যান্ডের পুনকাহারয়ু একটি বিখ্যাত এসকার।
৬. বহিঃধৌত সমভূমিঃ হিমবাহের প্রান্তভাগে যেখানে হিমবাহ গলে গিয়ে জলধারার সৃষ্টি হয়, সেই অংশে হিমবাহ বাহিত নুড়ি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে বিস্তীর্ণ সমভূমি গড়ে ওঠে তাকে বহি:ধৌত সমভূমি বা বহি:বিধৌত সমভূমি বলে।
উদা: কানাডার উত্তরাংশে এইপ্রকার বহি:ধৌত সমভূমি দেখা যায়।
৭. কেটলঃ বহি:বিধৌত সমভূমিতে অবক্ষেপের মধ্যে চাপা পড়ে থাকা বড় আকৃতির বরফখন্ড একসময় গলে গেলে সেখানে যেসব গর্ত বা অবনমিত অংশের সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে কেট্ল বলে।
উদা: স্কটল্যান্ডের উত্তরে ওর্কনি দ্বীপে এইরুপ কেট্ল দেখা যায়।
৮. নবঃ হিমবাহ গলা জলধারার মাধ্যমে হিমবাহ বাহিত নুড়ি, কাঁকর প্রভৃতি বহি:ধৌত সমভূমির মাঝে মাঝে সঞ্চিত হয়ে ছোটো ছোটো টিলার আকারে ভূমিরুপ সৃষ্টি করলে, সেগুলিকে নব বলে।
উদা: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হ্রদ অঞ্চলে বহু নব দেখা যায়।