ভূগর্ভের উতপ্ত তরল পদার্থ বা ম্যাগমা কোন দুর্বল স্থান বা ফাটল বরাবর ভূ-ত্বকের ওপরে এসে বা ভূত্বকের নীচে কোনো অংশে ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে শীতল ও জমাটবদ্ধ হয়ে কঠিন হলে তাকে আগ্নেয় শিলা বলে।
আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য ঃ
আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরুপ:
১) আগ্নেয় পদার্থ জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয়।
২) উত্তপ্ত তরল পদার্থ জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয় বলে এই জাতীয় শিলা সাধারণত স্ফটিকাকার।
৩) এই জাতীয় শিলার গঠনে কোন স্তর ভাগ থাকে না।তাই আগ্নেয় শিলাকে অস্তরীভূত শিলা বলা হয়।
৪) আগ্নেয় শিলা অপেক্ষাকৃত কঠিন হয়।
৫) উত্তপ্ত তরল পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয় বলে আগ্নেয় শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় না।
৬) এই জাতীয় শিলার উপাদানগুলি ঘনসংঘবদ্ধ।
৭) ভঙ্গুরতা যথেষ্ট কম হওয়ায় ক্ষয় প্রতিরোধের ক্ষমতা বেশি।
উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলার শ্রেণীবিভাগ ঃ-
উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলাকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১) নিঃসারী আগ্নেয় শিলা
২) উদবেধী আগ্নেয় শিলা
১) নিঃসারী আগ্নেয় শিলা ঃ ভূ-গর্ভের উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা ভূ-ত্বকের কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথ বরাবর ভূপৃষ্ঠের ওপরে উঠে এসে লাভারূপে প্রবাহিত হওয়ার সময় শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে দ্রুত জমাট বেঁধে কঠিন শিলায় পরিনত হলে এইরুপ আগ্নেয় শিলাকে নিঃসারী আগ্নেয় শিলা বলে।
উদাহরন ঃ ব্যাসল্ট, রায়োলাইট, অ্যান্ডেসাইট, অবসিড়িয়ান ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য ঃ i. ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে লাভা নির্গমন হলে এই শিলা সৃষ্টি হয়।
ii. দ্রুত জমাট বাঁধে বলে এই জাতীয় আগ্নেয় শিলার দানাগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়।
iii. এই জাতীয় শিলার রঙ হয় গাঢ় প্রকৃতির। iv.এই শিলার আপেক্ষিক ঘনত্ব হয় অপেক্ষাকৃত বেশি।
শ্রেণিবিভাগ ঃ
গঠনের তারতম্য অনুসারে নিঃসারী আগ্নেয় শিলাকে
দু'ভাগে ভাগ করা যায়-
I. লাভা শিলা:- ভূ-পৃষ্ঠে নির্গত লাভা শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বেঁধে যে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয় তাকে লাভা শিলা বলে।
উদা:- ব্যাসল্ট, অ্যান্ডেসাইট
II. পাইরোক্লাস্টিক শিলা:- অগ্ন্যুৎপাতের সময় আগ্নেয়গিরির মুখ ও ছিদ্রপথে পূর্বে থেকে জমে থাকা কঠিন লাভা, ছাই, সিন্ডার প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে বেরিয়ে এলে এগুলিকে পাইরোক্লাস্টিক শিলা বলে।
উদা:- আগ্নেয় টাফ্
২) উদবেধী আগ্নেয় শিলা ঃ ভূগর্ভের উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরের মধ্যেই ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে জমাট বেঁধে যে ধরনের আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে, সেইরুপ আগ্নেয় শিলাকে উদবেধী আগ্নেয় শিলা বলে।
উদা ঃ গ্রানাইট, গ্যাব্রো, পেরিডোটাইট, ডলোরাইট, পরফাইরি প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য ঃ i. ভূ-অভ্যন্তরের মধ্যেই ম্যাগমা জমাট বেঁধে এই শিলার সৃষ্টি হয়।
ii. ধীরে ধীরে শীতল হয়ে জমাট বাঁধে বলে এই জাতীয় আগ্নেয় শিলার দানাগুলি অপেক্ষাকৃত বড় হয়।
iii. এই জাতীয় শিলার রঙ হয় হালকা প্রকৃতির।
শ্রেণিবিভাগ ঃ
উৎপত্তি ও গঠনের তারতম্য অনুসারে উদবেধী আগ্নেয় শিলাকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
I. পাতালিক শিলা:- ভূগর্ভের উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরেই ভূ-ত্বকের অনেক নিচে সঞ্চিত হয়ে জমাট বেঁধে কঠিন শিলায় পরিণত হলে তাকে উদবেধী পাতালিক শিলা বলে।
বৈশিষ্ট্য :-
i. এইরুপ শিলা বহু বছর ধরে ধীরে ধীরে শীতল হয়ে কঠিন হয়।
ii. এরুপ শিলার দানাগুলি অপেক্ষাকৃত বড় হয়।
উদা:- গ্রানাইট, গ্যাব্রো, ডায়োরাইট প্রভৃতি।
II. উপপাতালিক শিলা:- ভূগর্ভের উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগেই ভূ-ত্বকের অল্প নীচে জমাটবদ্ধ হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হলে,তাকে উদবেধী উপপাতালিক শিলা বলে।
বৈশিষ্ট্য :-
i. এইরুপ শিলা পাতালিক শিলা অপেক্ষা দ্রুত জমাট বাঁধে।
ii. এরুপ শিলার দানাগুলি অপেক্ষাকৃত ছোটো হয়।
উদা:- ডোলেরাইট, পরফাইরি, গ্রানোপার প্রভৃতি।
রাসায়নিক গঠন অনুসারে আগ্নেয় শিলার শ্রেণিবিভাগ ঃ-
রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী আগ্নেয় শিলাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়--
I. আম্লিক শিলাঃ এই প্রকার আগ্নেয় শিলায় সিলিকার পরিমাণ খুব বেশি (প্রায় 65 শতাংশের বেশি) এবং বিভিন্ন ক্ষারকীয় অক্সাইডের পরিমাণ কম (প্রায় 35 শতাংশের কম) হয়।
উদাঃ- গ্রানাইট, রায়োলাইট, পেগমাটাইট প্রভৃতি।
II. মধ্যবর্তী শিলাঃ এই আগ্নেয় শিলায় সিলিকা এবং ক্ষারকীয় অক্সাইডের পরিমাণ থাকে প্রায় সমান।
উদাঃ- ডাইওরাইট, অ্যান্ডিসাইট, পরফাইরি প্রভৃতি।
III. ক্ষারকীয় শিলাঃ এই শিলায় ক্ষারকীয় অক্সাইডের পরিমাণ থাকে প্রায় 45 শতাংশ। ক্ষারকীয় অক্সাইডের আধিক্যের জন্য ইহা ক্ষারকীয় শিলা নামে পরিচিত।
উদাঃ- ব্যাসল্ট, গ্যাব্রো, ডোলেরাইট প্রভৃতি।
IV. অতিক্ষারকীয় শিলাঃ এই প্রকার আগ্নেয় শিলায় ক্ষারকীয় অক্সাইডের পরিমান প্রায় 55 শতাংশ বা তার অধিক এবং সিলিকার পরিমাণ 45 শতাংশের কম।
উদাঃ- পেরিডোটাইট, কিম্বারলাইট, কমেটাইট প্রভৃতি।