পলি জমাট বেঁধে সৃষ্টি হওয়ায় এই জাতীয় শিলার নাম পাললিক শিলা।
উদাহরণ ঃ বেলেপাথর, কাদাপাথর, চুনাপাথর প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য ঃ পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরুপ-
I. পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে একে স্তরীভূত শিলা বলে।
II. এই শিলা সহজেই ভঙ্গুর প্রকৃতির।
III. পলি জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয় বলে পাললিক শিলায় জীবাশ্ম দেখতে পাওয়া যায়।
IV. এই শিলা ছিদ্রযুক্ত হয়।
V. পাললিক শিলায় কাদার চিড় খাওয়া দাগ দেখতে পাওয়া যায়।
VI. পাললিক শিলা কমল প্রকৃতির হয়।
VII. সমুদ্র গর্ভে সৃষ্টি হয় বলে এই শিলায় অনেক সময় জলের ছোট ছোট ঢেউয়ের দাগ দেখা যায়।
শ্রেণিবিভাগ ঃ উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে পাললিক শিলাকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা-
A. সংঘাত পাললিক শিলা
B. অসংঘাত পাললিক শিলা
A. সংঘাত শিলা ঃ বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাথমিক আগ্নেয়শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বহুদিন ধরে জমাট বেঁধে যে পাললিক শিলার সৃষ্টি করে, তাকে সংঘাত শিলা বলে।
যান্ত্রিক উপায়ে সংঘাতের ফলেই এই শিলার সৃষ্টি হয় বলে ইহা সংঘাত শিলা নামে পরিচিত।
উদা ঃ কংগ্লোমারেট, ব্রেকসিয়া প্রভৃতি।
উৎপত্তি ও প্রকৃতির পার্থক্য অনুসারে সংঘাত শীলাকে দুটি উপ বিভাগে বিভক্ত করা যায়।
যথা-
1. জলে সঞ্চিত সংঘাত পাললিক শিলা ঃ
স্থলভাগজাত পলি জলে সঞ্চিত হয়ে যে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয় তাকে জলে সঞ্চিত সংঘাত শিলা বলে।
পলির দানা ও বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে জলে সঞ্চিত সংঘাত শিলাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
I. বড় দানাযুক্ত বা প্রস্তরময় পাললিক শিলা ঃ বৃহদাকার নুড়ি, পাথরখন্ড প্রভৃতি জমাট বেঁধে যে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয় তা প্রস্তরময় পাললিক শিলা নামে পরিচিত।
উপকূলের নিকটে এই জাতীয় শিলা দেখা যায়।
উদা ঃ কংগ্লোমারেট
II. বালুকাজাতীয় বা বালুকাময় পাললিক শিলা ঃ মোটা বালুকনা জমাট বেঁধে যে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয় তা বালুকাময় পাললিক শিলা নামে পরিচিত।
অগভীর সমুদ্রে এইজাতীয় শিলার অবস্থান দেখা যায়।
উদা ঃ বেলেপাথর
III. কর্দমজাতীয় বা কর্দমময় পাললিক শিলা ঃ অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পলি, কাদা প্রভৃতি জমাট বেঁধে যে পাললিক শিলার সৃষ্টি করে, তাকে কর্দমময় পাললিক শিলা বলে।
সমুদ্রের গভীর অংশে এই জাতীয় শিলার সঞ্চয় ঘটে।
উদা ঃ কাদাপাথর
2. স্থলসঞ্চিত সংঘাত পাললিক শিলা ঃ যে সমস্ত সংঘাত শিলা স্থলভাগেই সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি হয় তাকে স্থলসঞ্চিত সংঘাত শিলা বলে।
উদা ঃ টিলাইট, বেস্টোনাইট প্রভৃতি।
B. অসংঘাত শিলা ঃ কোনোপ্রকার সংঘাত ছাড়া রাসায়নিক উপায়ে বা জৈবিক উপায়ে সৃষ্ট সমস্ত পাললিক শিলাকে অসংঘাত শিলা বলে।
রাসায়নিক ও জৈবিক উপায়ে সৃষ্টি হওয়ায় কোনো কোনো সংঘাত ঘটে না বলে ইহা অসংঘাত শিলা নামে পরিচিত।
উদা ঃ চুনাপাথর, লবণশিলা প্রভৃতি।
অসংঘাত শিলাকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
1. জীবদেহ থেকে সৃষ্ট অসংঘাত শিলা ঃ বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহনির্গত চুনজাতীয় ও বালুকাজাতীয় পদার্থ এবং দেহাবশেষ জমাট বেঁধে অসংঘাত পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়।
উদা ঃ চুনাপাথর, কয়লা, ওপেল প্রভৃতি
2. রাসায়নিক উপায়ে সৃষ্ট অসংঘাত শিলা ঃ
রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলা দ্রবীভূত হলে শিলার দ্রবণ জমাট বেঁধে এইপ্রকার অসংঘাত পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়।
উদা ঃ সৈন্ধব লবণ, সোহাগা, গন্ধক, ফটকিরি প্রভৃতি রাসায়নিকভাবে সৃষ্ট অসংঘাত শিলা।