আর এই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবাধীন দেশ বা অঞ্চলগুলি মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত।
নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 10° থেকে 25° অক্ষরেখার মধ্যে এই জলবায়ু বিস্তৃত। আদর্শ মৌসুমী জলবায়ু পরিলক্ষিত হয় ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, দক্ষিণ চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে এছাড়া জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান এবং কাম্পুচিয়ায় এই জলবায়ু আংশিক ভাবে দেখা যায়।
মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যঃ-
মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপ--
✍ উষ্ণতা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য:-
ঋতুর প্রকৃতি:-
গ্রীষ্মকাল প্রচন্ড উষ্ণ ও আর্দ্র এবং শীতকাল শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির।
গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা:-
গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা 27°-32°C এর মধ্যে থাকে। কোনো কোনো অঞ্চলে এই তাপমাত্রা 35° থেকে 45°C পর্যন্ত হয়ে থাকে।
শীতকালীন উষ্ণতা:-
শীতকালের গড় তাপমাত্রা 10° থেকে 27°C এর মধ্যে থাকে। উচ্চ অক্ষাংশের দিকে এই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি চলে আসে।
উষ্ণতার প্রসর:-
এই অঞ্চলে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর 5°-11°C পর্যন্ত হয়ে থাকে। উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে দেশের অভ্যন্তরভাগের দিকে উষ্ণতার প্রসর অনেকটা বেশি হয়।
✍ বায়ুচাপ ও বায়ু প্রবাহ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য:-
খামখেয়ালী মৌসুমী বায়ু:-
মৌসুমী বায়ুর আগমনকাল ও প্রত্যাবর্তনকাল সুনির্দিষ্ট নয়, নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে ঘটে থাকে।অর্থাৎ, মৌসুমী বায়ু সম্পূর্ণ খামখেয়ালি চরিত্রের।
নিম্নচাপ ও উচ্চচাপ সৃষ্টি:-
গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ প্রচণ্ড উত্তপ্ত হওয়ায় এখানে গভীর নিম্নচাপ এবং সমুদ্রে অর্থাৎ ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় উচ্চচাপ। আবার শীত ঋতুতে স্থলভাগ উচ্চচাপের অন্তর্গত হয় এবং সমুদ্রে সৃষ্টি হয় নিম্নচাপ কেন্দ্র।
বায়ুপ্রবাহ:-
গ্রীষ্মকালে সমুদ্র থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু স্থলভাগের দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে শুষ্ক বায়ু সমুদ্রের দিকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু নামে প্রবাহিত হয়
বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ:-
গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড উত্তাপে বায়ুমন্ডলে অস্থিরতা শুরু হয়। অপরাহ্ণের দিকে ক্ষণস্থায়ী বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ ঘটে এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়, শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি সংঘটিত হয়।
✍ বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য:-
মৌসুমী বায়ুর প্রভাব:-
এই অঞ্চলে মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় 90 শতাংশ গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দ্বারা ঘটে থাকে।
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত:-
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 150 থেকে 200 সেমি।
বৃষ্টিপাতের বন্টন:-
বৃষ্টিপাতের বন্টন সর্বত্র সমান নয়।সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল গুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি কিন্তু দেশের অভ্যন্তরভাগের দিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হয়।
বৃষ্টিপাতের পদ্ধতি:-
এই জলবায়ু অঞ্চলে বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত ঘূর্ণবাতজনিত কারণে এবং শৈলোৎক্ষেপ প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়।
খরা ও বন্যার সৃষ্টি:-
মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালীপনার জন্য অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে কোথাও বন্যা, আবার খুব স্বল্প বৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির জন্য কোথাও খরার প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে।