ভৌমজলের নিয়ন্ত্রকঃ
জল চুঁইয়ে ভূঅভ্যন্তরে প্রবেশ করলে ভূত্বকের উপপৃষ্ঠীয় অংশ সম্পৃক্ত হয়ে সৃষ্টি হয় ভৌমজলস্তর। এই ভৌমজলস্তরে ভৌমজলের পরিমাণ নির্ধারিত হয় অনুস্রাবণের মাত্রার ওপর। আবার জলের অনুস্রাবণের মাত্রা কতকগুলি নিয়ন্ত্রকের ওপর নির্ভর করে। এগুলি হল নিম্নরূপ---
◆ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও স্থায়িত্ব:-
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে এবং তা দীর্ঘসময় ধরে স্থায়ী হলে অনুস্রাবণের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও ভূগর্ভে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং স্থায়িত্ব কম হলে অনুস্রাবণের মাত্রা কমে, ফলে ভৌমজলের সঞ্চয়ও কম হয়।
শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম এবং অল্প সময় ধরে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে বলে, ওই অঞ্চলে ভৌমজলের সঞ্চয়ও কম হয়।
◆ শিলা বা মাটির সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা:-
শিলা বা মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা ভৌমজল সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সচ্ছিদ্রতার পরিমাণ বেশি ও রন্ধ্রের আয়তন বড় হলে জল সহজে ভূঅভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে ভৌমজলের সঞ্চয় বাড়ে। সচ্ছিদ্রতা অধিক হলেও প্রবেশ্যতা কম হলে অর্থাৎ রন্ধ্রের আয়তন অতি ক্ষুদ্র হলে জল শিলা বা মৃত্তিকা রন্ধ্রে প্রবেশ করতে পারে না, ফলে ভৌমজলের সঞ্চয় কম হয়।
◆ ভূমির ঢাল:-
ভূমির ঢাল বেশি হলে জল দ্রুত নিচের দিকে গড়িয়ে যায়। ফলে সেই অংশে জল ভূঅভ্যন্তরে বিশেষ প্রবেশ করতে পারে না। তাই ভৌমজলের পরিমাণ কম হয়। ভূমির ঢাল কম হলে জলের পৃষ্ঠপ্রবাহ খুব ধীরগতিতে হয় এবং এই অবস্থায় অনুস্রাবণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ফলে ভূঅভ্যন্তরে জল প্রবেশ করে ভৌমজলের সঞ্চয়ও অধিক হয়।
◆ প্রবেশ্য ও অপ্রবেশ্য শিলার উপস্থিতি:-
প্রবেশ্য শিলার নিচে অপ্রবেশ্য শিলা অবস্থান করলে জলের নিম্নগতি বাধাপ্রাপ্ত হয়, ফলে অপ্রবেশ্য শিলার ওপর প্রবেশ্য শিলাস্তরে জল সঞ্চিত হয়ে ভৌমজলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
◆ বাষ্পীভবনের হার:-
বাষ্পীভবনের হার বেশি হলে অনুস্রাবণের মাত্রা কমে। ফলে ভৌমজলের সঞ্চয়ও কমে। বাষ্পীভবনের মাত্রা কমলে অনুস্রাবণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভৌমজলের পরিমাণ বাড়ে।
◆ ভূমি ব্যবহারের প্রকৃতি:-
গ্রামাঞ্চলের বিস্তীর্ণ ফাঁকা জায়গা জুড়ে, এছাড়া কৃষিকাজ প্রভৃতি কারণের জন্য মাটি আলগা হয় বলে বেশি মাত্রায় অনুস্রাবণের মাধ্যমে জল ভূঅভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং ভৌমজলের সঞ্চয় বাড়ায়।
আবার, শহরাঞ্চলে পাকা রাস্তা, কংক্রিটের ঢালাই -এর জন্য জলের অনুস্রাবণের হার কম, ফলে ভৌমজলের সঞ্চয়ও কম হয়।