মরু ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ঃ--
ডেভিস বর্ণিত মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের পর্যায়গুলি হল নিম্নরুপ:-
✍ প্রারম্ভিক পর্যায়ঃ
মরু ক্ষয়চক্রের প্রারম্ভিক পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
◆ ভূমির প্রারম্ভিক উত্থানে কতকগুলি পর্বতবেষ্টিত অববাহিকা সৃষ্টি হয়।
◆ প্রায় প্রতিটি অববাহিকার তলদেশ সেই অঞ্চলের ক্ষয়ের শেষ সীমা হিসেবে কাজ করে।
◆ অতিরিক্ত বাষ্পীভবনের ফলে নদী উপত্যকাগুলি শুকিয়ে যায়।
◆ অববাহিকাগুলির মধ্যস্থলে সবচেয়ে নিচু জায়গায় জল জমে ক্ষণস্থায়ী প্লায়া হ্রদ সৃষ্টি হয়।
✍ যৌবন পর্যায়ঃ
এই ক্ষয়চক্রের যৌবন অবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
◆ ক্ষয়িত পদার্থসমূহ পর্বতের ঢাল বেয়ে নেমে এসে উপত্যকার সম্মুখভাগে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার ভূমি বা পললশঙ্কু গঠন করে।
◆ উপত্যকার তলদেশে চুঁইয়ে আসা জল সঞ্চিত হয়ে প্লায়া হ্রদ গঠিত হয়।
◆ অস্থায়ী হ্রদের জল বাষ্পীভূত হয়ে গেলে হ্রদের প্রান্ত বেষ্টন করে লবণের সঞ্চয় ঘটে।
◆ প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে নুড়ি ও বালির আঘাতে বায়ুর অবনমন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ের দ্বারা বায়ুতাড়িত গর্তের সৃষ্টি হয়।
◆ বায়ুবাহিত বালুকারাশি অববাহিকার যেখানে সেখানে বালিয়াড়ি গঠন করে।
◆ এই যৌবন অবস্থায় উচ্চভূমির ক্ষয় ও উপত্যকা ভরাট একসঙ্গে হয় বলে ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায়।
✍ পরিণত পর্যায়ঃ
মরু ক্ষয়চক্রের পরিণত পর্যায়ে যে বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়, সেগুলি হল-
◆ ক্ষয়ের মাধ্যমে পর্বত ঢালের পশ্চাদপসরণ ঘটতে থাকে।
◆ পাহাড়ি এলাকার পাদদেশে ক্ষয়ের ফলে ঢালের পশ্চাদপসরণ ঘটলে মৃদু ঢালযুক্ত পাদদেশীয় সমভূমি গঠিত হয়।
◆ ঢালের নিম্নাংশে নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে পলিগঠিত সমভূমি বাজাদা গঠিত হয়।
◆ পরিণত পর্যায়ে ভূমির বন্ধুরতা হ্রাস পায়।
◆ এই পর্যায়ে জলবিভাজিকাগুলি আরও তীক্ষ্ণ হয় এবং মধ্যবর্তী নদী অববাহিকাগুলি প্রশস্ত হয়।
✍ বার্ধক্য পর্যায়ঃ
মরু ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য অবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
◆ বার্ধক্য পর্যায়ে ভূপ্রকৃতি প্রায় সমতল হয়ে যায়। সমগ্র অঞ্চল জুড়ে পাতলা আবরণযুক্ত শিলাময় সমপ্রায়ভূমি সৃষ্টি হয়, যা পেডিপ্লেন নামে পরিচিত।
◆ প্লায়ার প্রায় সমস্ত পলি বায়ুতাড়িত হয়ে উড়ে গিয়ে অন্যত্র সঞ্চয় করে লোয়েশ সমভূমি গঠন করে।
◆ ক্ষয়িত পদার্থসমূহ সম্পূর্নরুপে অপসৃত হওয়ার পর মরু সমভূমির উচ্চতা প্রারম্ভিক উচ্চতা অপেক্ষা অনেক কমে যায়।
◆ এই পর্যায়ের শেষ দিকে মরু সমপ্রায়ভূমির ওপর বিক্ষিপ্তভাবে ক্ষয় প্রতিরোধী কঠিন শিলায় গঠিত অনুচ্চ টিলা ইনসেলবার্জ সৃষ্টি হয়।
◆ এই পর্যায়ে বায়ুসৃষ্ট গর্ত ও বালিয়াড়ির সংখ্যা আরো বেড়ে যায়।