পশ্চিম ভারতে কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবন বা একদেশীভবনের কারণঃ-
পশ্চিম ভারতের গুজরা ও মহারাষ্ট্র ভারতের শ্রেষ্ঠ সুতিবস্ত্র উৎপাদক অঞ্চল। এই পশ্চিম ভারতে কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের বা একদেশীভবনের কারণগুলি হল নিম্নরূপ---
🕳 কাঁচামালের সহজলভ্যতাঃ
গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তুলার চাষ হয়। ফলে এই অঞ্চলের বস্ত্রবয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলিতে তুলা উৎপাদক অঞ্চল থেকে স্বল্প পরিবহন খরচে কাঁচাতুলার পর্যাপ্ত যোগান সহজেই পাওয়া যায়।
🕳 আর্দ্র জলবায়ুঃ
উপকূলীয় আর্দ্র জলবায়ু সুতো কাটার পক্ষে আদর্শ। আর ভারতের পশ্চিমাংশে গুজরাট, মহারাষ্ট্র আরবসাগরের উপকূলে অবস্থিত হওয়ায় আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে সুতো ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
🕳 বিদ্যুতের যোগানঃ
ভীরা, ভিবপুরী, খোপালি, উকাই প্রভৃতি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র; ট্রম্বে, থানে প্রভৃতি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র; এছাড়া মহারাষ্ট্রের তারাপুর, গুজরাটের কাকরাপাড় প্রভৃতি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের পর্যাপ্ত যোগান পাওয়া যায়।
🕳 বন্দরের সান্নিধ্যঃ
মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, নভসেবা; গুজরাটের সুরাট, পোরবন্দর এবং শুল্কমুক্ত কান্ডালা বন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা, শিল্পের যন্ত্রাংশ প্রভৃতি আমদানি এবং শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানির সুবিধা রয়েছে।
🕳 মূলধনের পর্যাপ্ততাঃ
স্থানীয় পার্শি, ভাটিয়া প্রভৃতি পুঁজিপতি শিল্পগোষ্ঠী এই অঞ্চলে বস্ত্রবয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত মূলধন বিনিয়োগ করে, ফলে মূলধনের যোগানে ঘাটতি হয় না।
🕳 উন্নত পরিবহন ব্যবস্থাঃ
পশ্চিম ভারতের বড় বড় শহর ও শিল্পাঞ্চলগুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে রেলপথ ও সড়কপথ দ্বারা যুক্ত হওয়ায় উৎপাদিত দ্রব্য দেশের অন্যান্য অংশে সহজেই পরিবহন করা যায়।
🕳 চাহিদা বা বাজারঃ
পশ্চিমাঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানে বস্ত্রের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এছাড়া, অধিক জনঘনত্বপূর্ণ ভারতের অন্যান্য প্রান্তেও বস্ত্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদা যথেষ্ট।
🕳 সুলভ শ্রমিকঃ
গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষি অনগ্রসর এলাকা থেকে সুলভে প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যায়। এছাড়া, দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও এই অঞ্চলের বস্ত্রবয়ন কেন্দ্রগুলিতে সুলভে দক্ষ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
উপরিউক্ত অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক পরিবেশের সাহচর্যের কারণে পশ্চিম ভারতে কার্পাস বস্ত্র বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবন বা একদেশীভবন ঘটেছে।