নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি সংক্রান্ত মেরু সীমান্ত মতবাদঃ
নরওয়েজীয় আবহবিদ ভি. বার্কনেস, জে. বার্কনেস ও সোলবার্গ ১৯১৮ সালে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি সংক্রান্ত মেরু সীমান্ত তত্ত্বের উপস্থাপনা করেন। মেরু সীমান্ত তত্ত্বের মূল কথা হল- মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আগত শীতল মেরু বায়ু এবং ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আগত উষ্ণ-আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু একটি সীমান্ত বরাবর পরস্পরের মুখোমুখি হলে পর্যায়ক্রমে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত গঠিত হয়।
এই ঘূর্ণবাত সৃষ্টির পর্যায়কে নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়---
🔷 প্রারম্ভিক পর্যায় (সাম্য সীমান্ত গঠন)-
মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল বায়ুপুঞ্জ ও ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে আগত উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ পরস্পরের সমান্তরালে বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। এবং উষ্ণ ও শীতল বায়ু খুব কাছাকাছি এলে তাদের মাঝখানে একটি সীমান্ত বা বায়ুপ্রাচীর গঠন করে। এই সাম্য সীমান্ত বরাবর বায়ুপুঞ্জের কোনো উল্লম্ব স্থানান্তর ঘটে না।
🔷 দ্বিতীয় পর্যায় (উষ্ণ ও শীতল সীমান্ত সৃষ্টি)-
এই পর্যায়ে সীমান্তপৃষ্ঠে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। বায়ুর চাপঢালের পার্থক্যের কারণে শীতল বায়ুপুঞ্জ উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে শীতল সীমান্ত সৃষ্টি করে এবং উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ শীতল বায়ুপুঞ্জকে ঠেলে সরিয়ে উষ্ণ সীমান্ত গঠন করে।
🔷 তৃতীয় পর্যায় (বাত তরঙ্গের উদ্ভব)-
এই পর্যায়ে সাম্য সীমান্ত বরাবর উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ ও শীতল বায়ুপুঞ্জের সংঘর্ষের ফলে উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের কিছু অংশ শীতল বায়ুপুঞ্জের মধ্যে ঢুকে পড়লে, বাত তরঙ্গের উদ্ভব হয়।
🔷 চতুর্থ পর্যায় (ঘূর্ণবাতের প্রাবল্য বৃদ্ধি)-
এইসময়, ভারী শীতল বায়ুপুঞ্জ মাটি ঘেঁসে হালকা উষ্ণ বাতাসকে দ্রুত ঠেলে সরিয়ে দিতে থাকে, কিন্তু উষ্ণ বাতাস শীতল বাতাসকে ঠেলে দ্রুত অগ্রসর হতে পারে না। ফলে, তখন উষ্ণ বাতাস শীতল বাতাসের সঙ্গে একটি তির্যক তল সৃষ্টি করে ওপরের দিকে দ্রুত উঠতে থাকে এবং শীতল ও ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে ও বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই পর্যায়ে সীমান্তের বক্রতা সবচেয়ে বেশি হয়।
🔷 পঞ্চম পর্যায় (অক্লুডেড ফ্রন্ট গঠন)-
এই পর্যায়ে শীতল সীমান্ত উষ্ণ সীমান্তের অভিমুখে দ্রুতবেগে এগিয়ে গিয়ে একটি বক্রাকার সীমান্ত বরাবর উষ্ণ সীমান্তকে সম্পূর্ণভাবে ঘিরে ফেলে, একে অন্তর্ধৃতি সীমানা বা অক্লুডেড ফ্রন্ট বলে।
🔷 অন্তিম পর্যায় (ঘূর্ণবাতের নিস্তেজ অবস্থা)-
এই অবস্থায় অক্লুডেড সীমান্ত বরাবর উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ শীতল বায়ুপুঞ্জের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে আবদ্ধ হয়ে মূল বায়ুপুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শীতল বায়ু দ্বারা বেষ্টিত থাকায়, উষ্ণ বায়ুর উষ্ণতা ও জলীয় বাষ্পের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের অস্তিত্ব ক্রমশ হারিয়ে গেলে ঘূর্ণবাতটি ধীরে ধীরে তার শক্তি হারিয়ে একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং ঘূর্ণবাতের পরিসমাপ্তি ঘটে।