সমুদ্রজলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণ বা নিয়ন্ত্রক
সমুদ্রজলের উষ্ণতা সর্বত্র সমান নয়। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরুপ্রদেশ পর্যন্ত সমুদ্রজলের উষ্ণতার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
সমুদ্রজলের উষ্ণতার এই তারতম্যের নিয়ন্ত্রক বা কারণগুলি হলো নিম্নরূপ---
👉 সূর্যরশ্মির পতনকোণঃ
সূর্যরশ্মির পতনকোণের পার্থক্যের কারণে সমুদ্রজলের উষ্ণতার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পতিত হওয়ায় সমুদ্রজলের উষ্ণতা বেশি হয়। আবার, নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্যরশ্মির পতনকোণ ক্রমশ কমতে থাকায়, সমুদ্রজলের উষ্ণতাও হ্রাস পেতে থাকে।
👉 সমুদ্রের গভীরতার পার্থক্যঃ
সমুদ্রজলের উষ্ণতার তারতম্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক সমুদ্রের গভীরতা। সমুদ্রের গভীরতা যত বাড়তে থাকে সমুদ্রের গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা কমতে থাকে।
👉 নিমজ্জিত শৈলশিরার অবস্থানঃ
সমুদ্রের তলদেশে আন্তঃসাগরীয় শৈলশিরা অবস্থান করলে সেই অংশে সমুদ্রের গভীরতা কমে যাওয়ায় সমুদ্রজলের উষ্ণতা বাড়ে। এছাড়া,এই নিমজ্জিত শৈলশিরা জলপ্রবাহের অবাধ সঞ্চালনে বাধার সৃষ্টি করে বলে শৈলশিরার দু'পাশের জলে উষ্ণতার পার্থক্য ঘটে।
👉 হিমশৈলের উপস্থিতিঃ
মেরু অঞ্চল থেকে হিমশৈল নাতিশীতোষ্ণমন্ডলের সমুদ্রে এসে পড়লে, হিমশৈলগলা শীতল জল ওই অঞ্চলের সমুদ্রের জলের সঙ্গে মিশে জলের উষ্ণতা হ্রাস করে।
👉 সমুদ্রস্রোতের প্রভাবঃ
সমুদ্রস্রোতের প্রভাবেও সমুদ্রজলের উষ্ণতার তারতম্য ঘটে। উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে উচ্চ অক্ষাংশের শীতল সমুদ্রজলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। আবার, শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে ক্রান্তীয় অঞ্চলে সমুদ্রজলের উষ্ণতা হ্রাস পায়।
👉 সমুদ্রজলের লবণতার পার্থক্যঃ
সমুদ্রজলের লবণতা বাড়লে জলের ঘনত্ব বাড়ে, ফলে জলের উষ্ণতাও বাড়ে। কম লবণাক্ত সমুদ্রজল অপেক্ষা অধিক লবণাক্ত সমুদ্রজলের তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি। তাই, সমুদ্রজলের লবণতা বেশি হলে উষ্ণতা বেশি হয় এবং লবণতা কম হলে সমুদ্রজলের উষ্ণতাও কম হয়।
👉 সমুদ্রের আকৃতি ও অবস্থানঃ
সমুদ্রের অবস্থান ও আকৃতি সমুদ্রজলের উষ্ণতার অন্যতম নিয়ন্ত্রক। স্থলভাগবেষ্টিত সমুদ্রে জলের অবাধ মিশ্রণ ঘটে না বলে চারপাশের উত্তপ্ত ভূখণ্ডের তাপ বিকিরণ ও পরিবহন পদ্ধতিতে আবদ্ধ সমুদ্রের জলকে উত্তপ্ত করে। আবার, তুলনামূলকভাবে নিকটবর্তী উন্মুক্ত সমুদ্রের জল কম উত্তপ্ত হয়।