অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ
জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পদ উৎপাদন, বন্টন, বিনিময়, ভোগ এবং পরিষেবাকে কেন্দ্র করে মানুষ যে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ করে, সেগুলিকে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বলে।
অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সমূহ কে পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা---
প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপঃ
প্রধানত নিজেদের চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে মানুষ সরাসরি প্রকৃতি থেকে সম্পদ সংগ্রহ ও উৎপাদনভিত্তিক যেসব কাজ সম্পাদন করে, সেগুলিকে প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বলা হয়।
যেমন- কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, বনজ সম্পদ সংগ্রহ, পশুপালন, খনিজ সম্পদ উত্তোলন প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য:
🔷 প্রথম শ্রেণীর অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সরাসরি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।
🔷 এটি সবচেয়ে প্রাচীনতম অর্থনৈতিক উদ্যোগ।
🔷 প্রাথমিক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ মূলত গ্রাম্য ভিত্তিক।
🔷 সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এইপ্রকার প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
🔷 এই ধরনের অর্থনৈতিক কাজে দৈহিক শ্রমের প্রয়োগ বেশি।
এই প্রথম শ্রেণির অর্থনৈতিক কাজে নিযুক্ত কর্মীদের Red Collar Workers বলা হয়।
দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপঃ
প্রাথমিক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করা হয় যে প্রক্রিয়াকরণমূলক কার্যাবলীর মাধ্যমে, সেগুলিকে দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বলা হয়।
যেমন- শ্রমশিল্প, প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য:
🔷 প্রথম শ্রেণীর অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে প্রাপ্ত দ্রব্যগুলিকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ গড়ে ওঠে।
🔷 দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজ সম্পদের মূল্য, উপযোগিতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
🔷 দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ মূলত নগরভিত্তিক।
🔷 এই প্রকার অর্থনৈতিক কার্যাবলী উন্নত প্রযুক্তি ও দৈহিক শ্রমের উপর নির্ভরশীল। এবং এক্ষেত্রে যন্ত্রশক্তির প্রয়োগ ঘটে।
🔷 এই প্রকার অর্থনৈতিক কাজের মাধ্যমে দেশের দ্রুত বিকাশ ঘটে।
দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজে নিযুক্ত কর্মীদের Blue Collar Workers বলা হয়।
তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপঃ
প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন বা এই দুটি স্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য মানুষ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে যে সেবা প্রদান করে এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখে, তাকে তৃতীয় স্তরের বা সেবাক্ষেত্রের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বলা হয়।
যেমন- স্বাস্থ্য পরিসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা, বীমা পরিষেবা প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য:
🔷 প্রথম স্তরের ও দ্বিতীয় স্তরের উৎপাদিত দ্রব্যের বিনিময় ও বন্টন তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের দ্বারা ঘটে থাকে।
🔷 তৃতীয় স্তরের কাজের পরিধি বাড়লে মানুষের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ও বিক্রি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।
🔷 তৃতীয় স্তরের কাজের পরিধি, বন্টন ব্যবস্থা প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ নির্ভর করে।
🔷 প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজে নিযুক্ত কর্মীদের তুলনায় এই ক্ষেত্রে যুক্ত কর্মীদের আয় অপেক্ষাকৃত অধিক হয়।
🔷 এই প্রকার অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে কাজের সুযোগ অনেক বেশি এবং কাজের পরিধি বাড়ানো যায়।
তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত কর্মীদের Pink Collar Workers বলা হয়।
চতুর্থ স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপঃ
উচ্চশিক্ষা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজের প্রসার ও সর্বাঙ্গীন উন্নতি ঘটানোর জন্য তথ্য আদান-প্রদান, গবেষণা এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত আধুনিক পরিষেবাভিত্তিক যে কার্যাবলী গড়ে ওঠে, তাকে চতুর্থ স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বলা হয়।
যেমন- তথ্য ও সংবাদ পরিবেশন, গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তি, উন্নয়নমূলক অর্থনৈতিক কাজ প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য:
🔷 উন্নত মেধা ও দক্ষ কর্মীদের উপর নির্ভর করে এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ সংঘটিত হয়।
🔷 এই প্রকার অর্থনৈতিক কার্যাবলীতে অতি উন্নত মানের পরিষেবা প্রদান করা হয়।
🔷 চতুর্থ শ্রেণীর অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সাম্প্রতিক সময়ের। অর্থাৎ এর উৎপত্তি ঘটে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের দিকে।
🔷 এই প্রকার অর্থনৈতিক কার্যাবলীর সাথে যুক্ত কর্মীদের আয় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
🔷 এই প্রকার অর্থনৈতিক কার্যাবলী নব্য স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ নামেও পরিচিত।
চতুর্থ স্তরের অর্থনৈতিক কর্মে নিযুক্ত কর্মীদের White Collar Workers বলা হয়।
পঞ্চম স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপঃ
মেধা, জ্ঞান ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে প্রধানত তৃতীয় চতুর্থ স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য যে উন্নত মানের অত্যাধুনিক পরিসেবা ভিত্তিক কার্যাবলী গড়ে ওঠে, সেগুলিকে পঞ্চম স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বলা হয়।
যেমন- পরামর্শদান, কর্মপন্থা নির্ধারণ, নির্দেশ দান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিচালন কর্ম প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য:
🔷 অর্থনৈতিক কার্যাবলীর শ্রেণীবিভাগের সর্বশেষ বা সর্বোচ্চ স্তর হল কুইনারী বা পঞ্চম স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ।
🔷 এই প্রকার অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ অতি সাম্প্রতিক সময়ের অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে এ ধরনের কার্যাবলী বিস্তার লাভ করে।
🔷 অতি উন্নত মেধা ও দক্ষ কর্মীর উপর নির্ভর করেই এই ধরনের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ গড়ে ওঠে।
🔷 এই ধরনের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত কর্মীদের আয়ের সুযোগ অনেক বেশি।
🔷 পঞ্চম স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ থেকে আধুনিক এবং অতি উন্নত মানের পরিষেবা পাওয়া যায়।
🔷 এই প্রকার অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ অতি সাম্প্রতিকতম বলে একে অতি নব্য স্তরের অর্থনৈতিক কার্যাবলিও বলা হয়।
পঞ্চম স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত কর্মীদের Gold Collar Workers বলা হয়।